Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

তেলজাতীয় ফসলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সম্প্র্রসারণ

তেলজাতীয় ফসলের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সম্প্র্রসারণ
ড. জগৎ চাঁদ মালাকার
বাংলাদেশে একটি জনবহুল দেশ। এদেশে তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম। এই জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সামগ্রিকভাবে একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নির্ভর করে সে দেশের মোট খাদ্যর প্রাপ্যতা, জনগণের খাদ্য ক্রয়ক্ষমতা এবং খাবার গ্রহণের উপর (সুষম বণ্টন)। তা ছাড়া প্রাপ্যতা থাকলেও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে জনগণ কিনতে পারবে না। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার ৫৩% আমরা পাই দানাদার খাদ্যশস্য থেকে যা দৈনিক ২১২২ কিলো-ক্যালরির ৭৫%। বাকি ২৫% কিলো-ক্যালরি আসে ফলমূল, শাকসবজি, ডাল ও তেল থেকে। মাথাপিছু তেল গ্রহণের চাহিদা ৩০ গ্রাম, আমরা গ্রহণ করি ২০-২২ গ্রাম। খাদ্য ও পুষ্টি দুটি বিষয় খুবই অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আমরা খাদ্য খাই দেহের পুষ্টি সাধনের জন্য। খাদ্য গ্রহণের ফলে দেহে পুষ্টি উপাদান শোষিত হয় এবং দেহের পুষ্টি সাধন ঘটে। ভালোভাবে জীবন ধারণের জন্য আমাদের পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান খুবই জরুরি একটি বিষয়। দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব হলে দেহে নানা সমস্যা তৈরি হয়। আমাদের মতো দরিদ্র দেশে পুষ্টি সমস্যা একটি মারাত্মক সমস্যা। অনেকেই পুষ্টি উপাদান, তার উৎস, অপুষ্টিজনিত সমস্য ও তার প্রতিকার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নাই।
¯েœহ পদার্থ আমিষের মতো প্রাণী এবং উদ্ভিদ দুই উৎস থেকেই পাওয়া যায়। যেমন- ঘি, মাখন, চর্বিযুক্ত মাংস, চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি প্রাণী থেকে এবং সরিষার তেল, তিলের তেল, বাদামের তেল, সয়াবিনের তেল ইত্যাদি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়।
তেল/¯েœহ পদার্থ দেহে শক্তি সরবরাহ করে (১ গ্রাম থেকে ৯ ক্যালরি পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়)। দেহের ত্বককে মসৃন রাখে এবং দেহকে আঘাত থেকে রক্ষা করে। খাবারকে সুস্বাদু ও মুখরোচক করে। তেল থেকে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড সরবরাহ করে, যা দেহের বৃদ্ধি, ত্বকের মসৃণতা রক্ষা করে এবং হৃৎপি-ের সঞ্চালনে সহায়তা করে। সবজিতে অবস্থিত ভিটামিন এ, ডি, ই, কে আমাদের শরীরের জন্য গ্রহণোপযোগী করতে হলে সবজিকে তেল দিয়ে রান্না করে খেতে হবে। সুষম খাদ্য বলতে এমন সব খাদ্য বোঝায় যা শরীরের প্রয়োজনীয় সবকটি পুষ্টি উপাদান (যথা- আমিষ, শ্বেতসার, শর্করা, ¯েœহপদার্থ, খাদ্যপ্রাণ, খনিজ লবণ এবং পানি) সঠিক পরিমাণে সরবরাহ করে থাকে।
বর্তমানে দেশ দানাজাতীয় খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও তেল, চর্বি ও প্রোটিনের পুষ্টিসমৃদ্ধ শস্য বিশেষভাবে তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনে অনেকটাই পিছিয়ে আছে, যা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (ঝউএং) ২০৩০ এর পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটি অর্জনের একটি প্রধান অন্তরায়। এ কথা অনস্বীকার্য যে, গুণগত মানসম্পন্ন পরিমিত ভোজ্যতেল খাওয়া ব্যতিরেকে পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন সম্ভব নয়, কারণ ভোজ্যতেলে রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড যা মানবদেহে তৈরি হয় না। এ ঘাটতি পূরণে ভোজ্যতেল সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। সেজন্য দেহকে সুস্থ, সুগঠিত ও রোগ প্রতিরোধে কার্যকর রাখতে নিয়মিত সঠিক পরিমাণ ভালোমানের ভোজ্য তেল গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, মানবদেহে দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালরির ৩০% তেল বা চর্বিজাতীয় খাদ্য থেকে আসা উচিত, কিন্তু আমাদের আসে মাত্র ৯% যা নিতান্তই অপ্রতুল। বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের ৯০% বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ আমদানি নির্ভরতার ফলে একদিকে যেমন বিদেশে প্রচুর অর্থ চলে যাচ্ছে, তেমনি আমদানি ও বিপণনে মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভরতা পণ্যটির বাজারকে প্রায়ই অস্থিতিশীল করছে। এখন সময় এসেছে দেশে তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে নিজেদের উৎপাদিত ভেজালমুক্ত তেল ব্যবহার করার।
তেলফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির দুটো কৌশল রয়েছে- একটি হলো বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে হেক্টরপ্রতি ফলন বৃদ্ধি (ঠবৎঃরপধষ ঊীঢ়ধহংরড়হ) অন্যটি হলো প্রচলিত শস্যবিন্যাসে তেলফসলকে অন্তর্ভুক্ত করে তেল ফসলের আবাদি এলাকা বৃদ্ধি (ঐড়ৎরুড়হঃধষ ঊীঢ়ধহংরড়হ)। এ মুহূর্তে দেশে প্রায় ২০ লাখ হেক্টর বোরো-পতিত-রোপাআমন শস্যবিন্যাস প্রচলিত আছে যাকে সরিষা-বোরো-রোপাআমন শস্যবিন্যাসে রূপান্তরিত করতে পারলে সরিষার উৎপাদন বৃদ্ধি অনেকাংশে সম্ভব। এ শস্য বিন্যাসটি প্রবর্তনের জন্য প্রয়োজন স্বল্পমেয়াদি রোপাআমন (জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন) এবং স্বল্প জীবনকালের সরিষার জাত (জীবনকাল ৭৫-৮০ দিন) বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে এরই মধ্যে স্বল্পমেয়াদি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে যা এখন সহজলভ্য। তাছাড়া অন্যান্য তেল ফসল যেমন-তিল, চীনাবাদাম, সয়াবিন এবং সূর্যমুখীর বেশ কিছু উন্নত জাত রয়েছে যেগুলো উচ্চফলনশীল হওয়ায় চাষের আওতায় এনে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
উল্লেখ্য যে, দেশে তেলজাতীয় ফসল সূর্যমুখী আবাদের একটি অপার সম্ভাবনা বিদ্যমান রয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ফসলটি চাষাবাদে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় ঘানিতে নিষ্কাশন করে লোকজন ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহারও করছেন। উচ্চফলনশীল খাটো জাতের প্রচলন এবং উপযুক্ত বাজার মূল্য নিশ্চিত করতে পারলে এ তেল ফসলটির আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব। বর্তমানে তেল ফসলের আবাদি জমি ৭.২৪ লাখ হেক্টর থেকে ১৫% বৃদ্ধি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং মৌচাষকে অন্তর্ভুক্ত করে হেক্টরপ্রতি ফলন ১.৩৪ মে.টন থেকে ১৫% বৃদ্ধি করতে পারলে দেশে অতিরিক্ত ১.২৫ লাখ মে.টন তেল উৎপাদন করা সম্ভব যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫,০০০ কোটি টাকা। বিশেষভাবে উল্লেখ, মৌ-চাষ পরাগায়ণের মাধ্যমে কেবল তেল ফসলের উৎপাদনই বাড়ায় না পাশাপাশি মধুও উৎপাদিত হয় যা থেকে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি এবং আলাদা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। এ সকল দিকগুলো বিবেচনা করে তেলজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধিপূর্বক ভোজ্যতেলের চাহিদাপূরণ ও আমদানি ব্যয় হ্রাস করণের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
মানুষ বাড়ছে জমি কমছে সেজন্য ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির চাপ আমাদের রয়েছে, ফলে অল্প জমিতে অধিক ফসল ফলানোর তাগিদও বাড়ছে। লক্ষ্য হচ্ছে এক জমি থেকে বছরে তিন ফসল ফলানো। আর এজন্য এমন সব ফসলের জাত প্রয়োজন যেন জমি প্রস্তুতের সময় ছাড়া বাকি সময়ে তিনটি ফসল কেটে নিয়ে আসা যায়। অনেক শস্য বিন্যাসে যেমন- সরিষা-বোরো-রোপা আমন-এ তিনটি  ফসলের জাত এমনভাবে নির্বাচন করতে হবে যেন ৩২০-৩৪৫ দিনের মধ্যে তিনটি  ফসলই সংগ্রহ করা যায়।  
ধান কৃষকদের প্রধান ফসল। কৃষক সাধারণত চায় ধানের ফলনের পাশাপাশি বাড়তি আরও ৩টি ফসল পেতে কৃষকরা স্বল্পমেয়াদি কিন্তু অধিক ফলনশীল জাত পছন্দ করেন। ধানের স্বল্পমেয়াদি আমন ধান, বিনা ধান-১৬, বিনা ধান-১৭,  ব্রি ধান-৩৩, ব্রি ধান৩৯, ব্রি ধান৪৯, ব্রি ধান৫৬, ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৭১, ব্রি ধান৭৫,  ব্রি ধান৮৭, ব্রি হাইব্র্রিড ধান৪, বাউ ধান-১ ও বোরো ধানের জাত যথাযথ ভাবে  চাষাবাদ করতে পারলে ফলন খুব একটা না কমিয়ে ২৩০-২৫০ দিনের মধ্যে দুটি ধান ফসল সহজে সংগ্রহ করা সম্ভব। কৃষকের কাছে সে রকম জাতের তথ্য পৌঁছে দেয়া এবং শস্যবিন্যাসে এদের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা বড় প্রয়োজন। আর সেটা পারলে দুই ধানের মাঝখানে      ৮০-৯০ দিনের উচ্চফলনশীল সরিষার জাত বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৫, বারি সরিষা-১৭, বিনা সরিষা-৯, বাউ সরিষা ১, বাউ সরিষা-২, বাউ সরিষা-৩ আবাদ করা সম্ভব। যে সকল জমিতে আউশ বা পাট আবাদ করা হয় সে সকল জমিতে সরিষা চাষের জন্য বারি সরিষা-১৮ (ক্যানোলা টাইপ) নির্বাচন করা যেতে পারে। কারণ উক্ত জাতের জীবনকাল ও ফলন বেশি।
মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি মহোদয়ের নির্দেশনায় তেল ফসলের আমদানি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দেশ অচিরেই এর সুফল পাবে বলে আশা করা যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে হবে। জাতির পিতার মহামূল্যবান বাণী অনুসরণ করে সম্মানিত কৃষক ভাইদের তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির আহ্বান জানাচ্ছি।

লেখক : ড. জগৎ চাঁদ মালাকার, প্রকল্প পরিচালক, কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজে স্থাপিত উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫। ইমেইল: লধমড়ঃথসধষধ@ুধযড়ড়.পড়স,  ফোন : ০১৭১৬০০৪৪০০


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon